কনডম
কনডম কী ?
কনডম প্রধানত যৌনসংগমকালে ব্যবহৃত এক প্রকার জন্মনিরোধক বস্তু। এটি মূলত গর্ভধারণ ও গনোরিয়া, সিফিলিস ও এইচআইভি-এর মতো যৌনরোগের প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি পুরুষদের উত্থিত পুরুষাঙ্গে পরানো হয়। রেতঃস্খলনের পর কনডম যৌনসঙ্গীর শরীরে বীর্য প্রবেশে বাধা দেয়। কনডম জলাভেদ্য, স্থিতিস্থাপক ও টেকসই বলে একে অন্যান্য কাজেও লাগানো যায়। বীর্যহীনতা চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য কনডমের মধ্যে করে বীর্য সংগ্রহ করা হয়। জলাভেদ্য মাইক্রোফোন তৈরি ও রাইফেলের ব্যারেল নোংরা পচা বস্তু দ্বারা বুজে যাওয়া আটকাতেও কনডম ব্যবহৃত হয়।
আধুনিক যুগে কনডম মূলত তরুক্ষীর থেকে প্রস্তুত করা হয়। তবে কনডম তৈরি ক্ষেত্রে অনেক সময় পলিআরথিন, পলিইসোথ্রিন বা ল্যাম্ব ইনসেসটাইনও ব্যবহৃত হয়। মহিলাদের কনডমও পাওয়া যায়। জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হিসেবে কনডম অত্যন্ত সুলভ, সহজে ব্যবহার্য, কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত ও যৌনব্যাধি প্রতিরোধে সর্বাধিক কার্যকর। সঠিক জ্ঞান ও ব্যবহার কৌশল এবং যৌনসংগমের প্রতিটি ক্রিয়ায় ব্যবহৃত হলে যেসব মহিলাদের পুরুষ যৌনসঙ্গীরা কনডম ব্যবহার করেন, তারা বার্ষিক মাত্র ২ শতাংশ গর্ভাবস্থার সম্মুখীন হন।
কনডম প্রায় ৪০০ বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকেই কনডম ব্যবহার সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় জন্মনিরোধ পদ্ধতি। আধুনিক সমাজে কনডমের ব্যবহার ব্যাপক মান্যতা লাভ করেছে। যদিও যৌনশিক্ষা পাঠক্রমে কনডমের ব্যবহার ইত্যাদি প্রসঙ্গে কনডম নিয়ে কিছু বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে।
কনডম কীভাবে ব্যবহার করবেন?
কনডম হলো সবচেয়ে নিরাপদ এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। তবে সঠিক নিয়মে কনডম ব্যবহার না করলে ঝুঁকি বাড়তে পারে। কনডম ব্যবহার করার পরেও আক্রান্ত হতে পারেন বিভিন্ন যৌন রোগে এবং হঠাৎ করেই গর্ভে সন্তান চলে আসতে পারে। সঠিকভাবে কনডম ব্যবহার করতে নিচের নির্দেশনা গুলি মেনে চলুন-
- প্রথমে কনডমের প্যাকেটের যে কোন এক দিকে ধরে ভালোভাবে প্যাকেট খুলে ফেলুন। কনডমের প্যাকেট দাঁত দিয়ে কাটতে যাবেন না কিংবা মাঝ বরাবর প্যাকেট ছিড়বেন না। এক্ষেত্রে প্যাকেটের ভেতরে থাকা কনডম ছিড়ে যেতে পারে।
- প্যাকেটের ভেতর থেকে বের করার পর লক্ষ করুন যে কনডমটি কোন দিক থেকে ঘুরিয়ে খুলতে হবে। এটি সঠিকভাবে বুঝতে না পারলে সহবাসের সময় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হতে পারে। এক্ষেত্রে লুব্রিকেন্ট দিয়ে পিচ্ছিল করা দিক ভেতরের দিকে চলে গেলে মহিলাদের যোনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- পিচ্ছিল দিকটি নির্ণয় করে এক হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে কনডমের মাথায় হালকা করে ধরুন এবং আরেক হাত দিয়ে রাবারের মোড়ানো অংশটি লিঙ্গ বরাবর স্থাপন করুন।
- এরপর আস্তে আস্তে রাবারে মোড়ানো দিক লিঙ্গের বরাবর পেছনের দিকে রোল করুন। এ সময় খেয়াল রাখতে হবে যে কনডমের মাথায় ফাঁকাস্থানে যেন কোন বাতাস ঢুকে না থাকে। বাতাস ঢুকে থাকলে সহবাসের সময় কনডম ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- গোপনাঙ্গে কনডম পরানো হয়ে গেলে এবার আস্তে আস্তে তা আপনার সঙ্গিনের গোপনাঙ্গে প্রবেশ করান।
- মনে রাখতে হবে যে গোপনাঙ্গ উত্তেজিত না হওয়া পর্যন্ত কখনো কনডম পড়তে যাবেন না।
- মিলন শেষ হলে পারতপক্ষে লিঙ্গ উত্তেজিত অবস্থায় কনডমসহ বের করে আনুন। অন্যথায় বিব্রত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। লিঙ্গ বের করে আনার সময় লিঙ্গের গোড়ায় কনডমের রাবার হাত দিয়ে চেপে ধরুন যাতে লিঙ্গ থেকে কনডম খুলে না যায়।
- এরপর টয়লেটে গিয়ে কনডম খুলে ফেলে দিন এবং গোপনাঙ্গ পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
কনডমের সুবিধা কী?
সহবাসের সময় কনডম ব্যবহার করলে নানাবিধ সুবিধা পাওয়া যায়। প্রথমত আপনি সবচেয়ে নিরাপদ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করার পাশাপাশি যৌনবাহিত রোগের সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারছেন। তাছাড়া যাদের ইরেক্টাল ডিসফাংশন বা দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা থাকে তাদের ক্ষেত্রে বীর্যপাত দেরিতে হতে কনডম সহায়তা করে।
কনডমের অসুবিধাগুলি কী কী?
কনডম ব্যবহারে তেমন কোন অসুবিধা এখন পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি। তবে এটি ব্যবহারের ফলে লিঙ্গের ওপর একটা আবরণ করে বলে সহবাসের আসল স্বাদ অনেকেই অনুভব করতে পারেন না। তাছাড়া কনডমে ব্যবহৃত লুব্রিকেন্ট এর কারণে অনেকের এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়।
শেষ কথা
যতগুলো জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি পদ্ধতি হলো কনডমের ব্যবহার। এটি নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী। অন্য কোন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আপনাকে যৌন রোগ থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করবে না যেখানে কনডম ১০০% কার্যকরী। অনেকে পিল গ্রহন করলে শরীর ফুলে যায় অথবা ইনজেকশন নিতে গেলে সমস্যা ধরা পরে তাই এসব ব্যাক্তিদের জন্য কনডম উপযুক্ত। তবে কনডম ফেটে গিয়ে অনেক সময় এর কার্যকারিতা হারাতে পারে। তাই অবশ্যই উপরে উল্লেখিত কনডম ব্যবহারের নিয়ম গুলো সঠিকভাবে মেনে চলুন।